আমার পছন্দের যতো বই আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর একটা বই থেকে আমি তোমাদের গল্প শোনাবো... নামটা এখন বলবো না তোমরা বুঝতে পারলে বোলো...
১। কিজিল-আয়িয়াক
আকশের তলে যত পাহাড়ে গা আছে, আমার জন্মের জায়গাটা তার
মধ্যে সবচেয়ে সেরা, সবচেয়ে সুন্দর । আমাদের গা কথা বলে, সবচেয়ে মিষ্টি আমুদরিয়া নদির গানে। জীবনে শুধু একবার, এক ঢোক তার জল খেলে, সে স্বাদ কখন ভোলা যাবে না।
আজ পর্যন্ত রোজ সকালে গায়ের চারপাশে দেখা যাবে খরগোশ, সজারু, শেয়াল, হিংশ্র শৃগালের নখরের দাগ। সে কি বলবো!
ছেলেবেলায় আমার ধারনা ছিলনা কিজিল-আয়িয়াক জিনিসটা কী।
হয়ত তার জন্য দায়ী আমার আত্মীয় স্বজনেরা। আমাদের বাড়ি বেড়াতে এসে তারা সবসময় আমায় খেপাতঃ
'কই, দেখা তো তোর পা। তুই যখন কিজিল-আয়িয়াকের ছেলে তখন তর পা হবে সোনার।'
তুর্কমেন ভাষায় 'কিজিল' মানে লাল, তবে 'সোনা'ও বোঝানো যায়। আয়িয়াক
– পা। তবে প্রতিবেশী জাতিদের ভাষায় 'আয়িয়াক' মানে পাত্র, পেয়ালা। রুপকথার শাহ জেমশিদের ছিল আশ্চর্য এক সোনার পেয়ালা – কিজিল আয়িয়াক। তাতে তাকিয়ে জেমশিদ শাহ দেখতে পেত দুনিয়ায় কি ঘটছে।
খুব সম্ভব আমাদের গায়ের এই নাম হয়েছে তার আগেকার অধিবাসীদের ধনদৌলতের দরুন। লোকে বলে, ভেড়ার পালে এখানকার বালি ছেয়ে যেতো যেভাবে বাদলার দিনে মেঘে ঢেকে যায় আকাশ । অবিশ্যি এসব পালেরই মালিক ছিল জন কয়েক ধনী জমিদার বা বাই। জনগন যখন নিজেদের হাতে ক্ষমতা নিল , বাইরা তাদের গরু-ভেড়া নিয়ে চলে যায় আফগানিস্থানে।
পাশের গ্রাম থেকে পরিত্যক্ত কিজিল-আয়িয়াকে, তার উর্বর জমিতে উঠে আসে ষাট জন দেকখান-চাষি, আমার বাবা ছিল তাদের একজন। গড়া হল যৌথ খামার ‘তিয়াজে দুনিয়া’ (নয়া দুনিয়া)।
তারপর অনেক দিন কাটল। সোনার কাপ শুন্যি হয় নি। আমাদের কালে আমাদের গা সত্যি করেই সোনার কাপ –
এ মাটির প্রতি যারা অকৃতজ্ঞ, যারা তাকে ফেলে পালিয়েছিল, তারা এখন দারুন হিংসেয় জ্বলে মরছে।
No comments:
Post a Comment